জিয়া হাবীব আহ্সানঃ
প্রশ্নঃ- তসদিক কাকে বলে ?
উত্তরঃ- তসদিকের অর্থ দ্বারা কোন দলিল ভেরিফিকেশন বা এটাস্টেশন করাকে বুঝায়।
প্রশ্নঃ-তহশীলদার কে?
উত্তরঃ- খাজনা বা রাজস্ব আদায়কারী অফিসকে তহশীল বা তহশীল অফিস বলে। আর খাজনা বা রাজস্ব আদায়কারীকে তহশীলদার বলা হয়।
প্রশ্নঃ- সেলামী কি ?
উত্তরঃ- কোন সম্পত্তি লীজ/ ভাড়া বা পত্তন নেওয়ার জন্য খাজনা / ভাড়ার অতিরিক্ত যে অর্থ নজরানা স্বরূপ দেওয়া হয় তাকে সেলামী বলে। তবে শ্রদ্ধাভাজন কোন ব্যক্তিকে কোন উপহার সামগ্রী প্রদান করাকেও সেলামী বলে।
প্রশ্নঃ- ময়না তদন্ত কি ?
উত্তর ঃ-ফৌজদারী কার্যবিধির ৫০৯(ক) ধারার বিধান মতে ডাক্তার মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করে যে রিপোর্ট দেন তাকে ময়না তদন্ত রিপোর্ট বা ঢ়ড়ংঃ গড়ৎঃবহ ৎবঢ়ড়ৎঃ বলে। এ-রিপোর্ট মামলায় গুরত্বপূর্ণ সাক্ষ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়।
প্রশ্ন ঃ- সুরতহাল রিপোর্ট কি ?
প্রশ্ন ঃ- হত্যা, আত্নহত্যা কিংবা যে কোন দুর্ঘটনা বা অপমৃত্যুর ঘটনায় সাক্ষীদের সাক্ষাতে লাশের শরীরের অবস্থা সম্পর্কে যে রিপোর্ট তৈরী করা হয় তাকে ‘সুরতহাল রিপোর্ট ’ বলে। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৪ ধারার অধীনে কোন পুলিশ অফিসার ঘটনাস্থলে বা পাড়ার দুই কিংবা ততোধিক সম্ভ্রান্ত ব্যক্তির উপস্থিতিতে মৃত্যুর কারণ বের করার জন্য সরেজমিনে তদন্ত পূর্বক সুরতহাল রিপোর্ট তৈরী করেন। মৃত ব্যক্তির দেহের অবস্থান, জখম, অস্থিভঙ্গ, থেতলানো, আঁচরের দাগ, মচকানো, ফোলানো ও অন্যান্য জখমের বর্ণনা করে, যে উপায়ে বা অস্ত্র্ত্র কিংবা যন্ত্র দ্বারা উক্ত আঘাতের চিহ্নের সৃষ্টি হয়েছে বলে প্রতীয়মান হয়, তার উল্লেখ করে মৃত্যুর দৃশ্যমান কারণ সম্পর্কে প্রণীত রিপোর্টকেই সুরতহাল রিপোর্ট বলে। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৪ এবং ১৭৬ ধারায় ওহয়ঁবংঃ সম্পর্কে বলা হয়েছে।
প্রশ্নঃ- ‘নজির’ মানে কি ?
উত্তরঃ-‘নজির, অর্থ দৃষ্টান্ত। উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বা উর্দ্ধতন আদালতের দৃষ্টান্ত বা নজির মেনে চলাকে চৎবপবফবহঃ বলে। অর্থাৎ এর দ্বারা কোন বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে নিম্ন আদালত কর্তৃক উর্ধ্বতন আদালতের পূর্ব সিদ্ধান্ত অনুসরণ করা বুঝায়।
প্রশ্ন ঃ-আমমোক্তারনামা কি?
উত্তরঃ-এটা এক প্রকার নিদর্শনপত্র (ডকুমেন্ট) যা দ্বারা এক বা একাধিক নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে মোক্তারনামাদাতার এজেন্ট বা প্রতিনিধি হয়ে সকল প্রকার কাজকর্ম করার ক্ষমতা প্রদান করা হয়। মোক্তারনামার রেজিস্ট্রিকৃত হওয়া বাঞ্চনীয়। যাকে আমমোক্তার নিয়োগ করা হয় তাকে এর্টনি বলে।
প্রশ্ন ঃ- পাট্টা কাকে বলে ?
উত্তরঃ-এটা এক প্রকার লীজ। তবে শর্তযুক্ত। এতে মালিক তাঁর প্রজাকে জমি ভোগ করার অধিকার বর্ণনা দিয়ে থাকে। বর্তমানে পাট্টার আর প্রচলন নেই। সম্রাট শেরশাহ পাট্টা প্রর্বতন করেন।
প্রশ্ন ঃ- ‘কবুলিয়ত’ মানে কি ?
উত্তর ঃ- মালিক বা সরকারের বরাবরে রায়ত বা প্রজা কর্তৃক মালিকের অধিকার স্বাক্ষর পূর্বক কোন দলিল দিলে তাকে ‘কবুলিয়ত’ বলে। কবুলিয়তের বিষয়টি লীজের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং লীজ গ্রহীতাই কবুলিয়ত সম্পাদন করবে।অবশ্য সে জন্য কবুলিয়তের শর্তে লীজ দাতারও সম্মতি থাকা প্রয়োজন। হস্তান্তর আইনের ১০৭ ধারা মতে লীজ দাতাও কবুলিয়তে সম্পাদন স্বরূপ স্বাক্ষর করবে। পূর্বে বিভিন্ন প্রকার কবুলিয়ত চালু ছিল। যেমনঃ- রায়তি, দর রায়তি, কোর্ফা ও বর্গা কবুলিয়ত। বর্তমানে ভূমিহীনদের মধ্যে খাস জমি বন্দোবস্ত ও অন্যান্য ক্ষেত্রে কবুলিয়ত সম্পাদন করা হয়ে থাকে। সম্রাট শেরশাহের আমলে এটা চালু হয়। এক কথায় ইজারা গ্রহীতা ও দাতার মধ্যে সম্পত্তি ব্যবহারে যে চুক্তিনামা হয় তাকে ‘কবুলিয়ত’ বলে।
প্রশ্ন ঃ- তফসিল কি?
উত্তর ঃ-ফার্সী শব্দ তফছিল অর্থে আনুক্রমিক বর্ণনা বুঝায়। জমি/ সম্পত্তির (তা স্থাবর বা অবস্থার হতে পারে) বিস্তারিত বর্ণনাকে তফছিল বলে। ইংরেজিতে তফসিলকে ঝপযবফঁষব বলে।
প্রশ্ন ঃ পরোয়ানা অর্থ কি?
উত্তর ঃ- পরোয়ানা অর্থ আদালত কর্তৃক সমন, নোটিশ, ওয়ারেন্ট প্রভৃতির আদেশ নামা।
প্রশ্ন ঃ- খাস মহল কি ?
উত্তর ঃ-সরকারের সরাসরি অধীনে ও নিয়ন্ত্রণে যে ভূমি সম্পত্তি থাকে তাকে ‘খাস মহল’ বলে। ১৯৭৩ সনে জমিদারী আওতা বহির্ভূত খাস জমি বন্দোবস্তের খাজনাদি আদায় ও ব্যবস্থাপনার জন্য জেলা কালেকটরের অফিসে (ডি.সি অফিস) খাস মহল শাখা প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এই শাখার কার্যক্রম নেই। রাজস্ব শাখা খাস মহল তথা খাস জমির বন্দোবস্ত কার্যক্রম ও ব্যবস্থাপনা নিয়ন্ত্রন করে।
প্রশ্ন ঃ-কানুনগো কে ?
উত্তর ঃ-এটা ফার্সী শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে আইন বিষয়ে অভিজ্ঞ। বর্তমানে কানুনগো পদটি কয়েকটি অফিসে প্রচলিত শব্দ। রাজস্ব ক্ষমতাপ্রাপ্ত হলে তিনি (কানুনগো) একজন রাজস্ব অফিসারের মর্যাদার কতিপয় গুরত্বপূর্ণ কার্যক্রম সম্পাদন করতে পারেন। ভূমি জরিপে তসদিক সহ আনুষাংগিক রাজস্ব ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত কার্যক্রম যেমন-রেকর্ড হালকরণ কার্যক্রম।জোনাল জরিপ ব্যবস’াপনায় কানুনগোগনকে উপ-সহকারী সেটেলমেন্ট অফিসার বলা হয়।
প্রশ্ন ঃ- ‘আমিন’ কে ?
উত্তরঃ- এটা আরবী শব্দ। এর অর্থ হচ্ছে বিশ্বাস। কিন্তু ভূমি জরিপের আমিন বলতে মাঠ পর্যায়ের একজন গুরত্বপূর্ণ কর্মচারী। যিনি কিস্তোয়ার, খানাপুরী ও খানাপুরী-কাম্ বুঝারত সহ অন্যান্য আনুষাংগিক কার্যক্রম করে রেকর্ডের (নকশা ও খতিয়ান) প্রাথমিক ভিত্তি প্রণয়ন করেন। মাঠ জরিপ মৌসুমে আমিনগন সাধারণত ছয় মাসের জন্য নিয়োজিত হয়। ৩ জনের একটি দল মৌজা ভিত্তিক জরিপ কার্যক্রম পরিচালনা করেন। দল প্রধানকে সর্দার আমিন, অপর দুইজনকে বদর আমিন ও চেইনম্যান বলে।
প্রশ্ন ঃ- দেবোত্তর মানে কি ?
উত্তরঃ- হিন্দু বিধানে দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গকৃত সম্পত্তিকে দেবোত্তর বলে। দেবোত্তর সম্পত্তির খাজনা দিতে হয় না। বাংলাদেশের অনেকেই বর্তমানে দেবোত্তর সম্পত্তিকে অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে গণ্য করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করেন। দেবমূর্তি বাংলাদেশে অবস্থান করলে এবং যথাযথ মালিক কর্তৃক দেবতার উদ্দেশ্যে দান করলে সেই সম্পত্তি অর্পিত হতে পারেনা। দেবোত্তর সম্পত্তি যিনি দেখাশুনা করেন তাকে সেবাইত বলা হয়। ‘সেবাইতের’ উক্ত সম্পত্তি হস্তান্তরের অধিকার নেই।
প্রশ্নঃ- খারিজ দাখিলা কি?
উত্তর ঃ- রাষ্ট্রীয় অর্জন ও প্রজাস্বত্ব আইনের বিধান অনুসারে ঐড়ষফরহম বা জোত আলাদা করে নিলে যিনি আলাদা করে নেন তার নামে আলাদা জোত খোলা হয় এবং আলাদা ভাবে খাজনা নেয়া হয়। আলাদা ভাবে খাজনা নেওয়ার রশিদ বা দাখিলাকে খারিজ দাখিলা বলে। মূল জোত হতে নিজের অংশ আলাদা করে নিয়ে অন্য একটি খতিয়ান বা ঐড়ষফরহম খোলাকে খারিজ বলে।
প্রশ্ন ঃ- এওয়াজ নামা কি ?
উত্তর ঃ- এওয়াজ অর্থ বিনিময়। এর ইংরেজী অর্থ ঊীপযধহমব। বিনিময় দলিলকে এওয়াজ নামা বলা হয়।
প্রশ্ন ঃ-এজমালি দ্বারা কি বুঝায় ?
উত্তর ঃ-একত্রিত বা অবিভক্ত সম্পত্তিকে এজমালী সম্পত্তি বলে। এজমালী সম্পত্তি মানে যৌথ কোন ব্যক্তির মৃত্যু হওয়া মাত্রই তার সম্পত্তি উত্তারাধিকারীগণের উপর বর্তায়। উত্তারাধিকারীগণের মধ্যে আইন নির্দ্দিষ্ট উপায়ে বিভাগ বন্টন না হওয়া পর্যন্ত উক্ত সম্পত্তি এজমালী বলে গণ্য হয়।
প্রশ্ন ঃ- মৌরসী সম্পত্তি কি ?
উত্তর ঃ যে সম্পত্তি উত্তারাধিকারী সূত্রে প্রাপ্ত তা মৌরসী সম্পত্তি নামে পরিচিত। এ সম্পত্তির সাথে খরিদা সম্পত্তির কোন পার্থক্য নেই।
প্রশ্ন ঃ- হিজানত কি ?
উত্তর ঃ-নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত মুসলিম আইনানুসারে শিশুর দেখাশুনা ও পরিচর্যার অধিকারকে আইনের ভাষায় হিজানত বলে। হিজানত দ্বারা অভিভাবকের অধিকার সৃষ্টি হয় না।
প্রশ্ন ঃ- চূড়ান্ত রিপোর্ট কি?
উত্তর ঃ- তদন্ত কর্মকর্তা কর্তৃক তদন্ত পূর্বক যখন আসামীর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায় না তখন তাকে মামলা দায় থেকে অব্যাহতি প্রদানের জন্য বিজ্ঞ আদালতে সুপারিশ সহ যে রিপোর্ট দাখিল করেন তাকে চূড়ান্ত প্রতিবেদন বলে। ফৌজদারী কার্যবিধির ১৭৩ ধারায় তদন্ত কর্মকর্তা চার্জশীট বা ফাইন্যাল রিপোর্ট দিয়ে থাকেন।
প্রশ্নঃ- আলামত কাকে বলে ?
উত্তরঃ-ফৌজদারী মামলার তদন্তকালে পুলিশ কর্তৃক মামলার বিষয়বস্তু সম্পর্কিত যে সকল দ্রব্যাদি সিজ করা হয় সাধারণত তাকে ‘আলামত’ বলা হয়। বিচারকালে বিচারকের নির্দেশ ক্রমে আলামত আদালতে হাজির করা হয়।
লেখক : আইনজীবী, কলামিস্ট,
মানবাধিকার ও সুশাসনকর্মী।
প্রতিদিনের খবরগুলো আপনার ফেসবুক টাইমলাইনে পেতে নিচের লাইক অপশনে ক্লিক করুন-